'দেশ উন্নয়নে কাজ করেছি, দুর্নীতির লাগাম না ধরতে পারায় সুফল আসেনি: সাবেক এমপি শফিউল

কোর্ট রিপোর্টার

১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম

পলিসি মেকিং থেকে শুরু করে দেশের উন্নয়নে কাজ করেছি। দুর্নীতির লাগাম না ধরতে পারায় সুফল আসেনি বলে আদালতকে বলেছেন ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম
জাকির হোসাইনের আদালতে ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় রউফ নামে এক যুবক নিহতের মামলায় রিমান্ড শুনানিতে তিনি এসব বলেন।

এর আগে, মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক আল মাহমুদ শরীফ আসামিকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিন হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম মিলি রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী শুনানিতে বলেন, এ আসামি ফ্যাসিস্টের সহযোগী। বিনা ভোটের এমপি। মামলার ঘটনার সাথে জড়িত। প্রাথমিক অভিযোগে নাম আসায় তাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থণা করছি।

আসামিপক্ষে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম মিলি রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, শফিউল ইসলাম এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি, সিআইপি। বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি। রিমান্ড আবেদনের পক্ষে প্রসিকিউশন একটা ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি। মামলা যে পরিকল্পিত তার প্রমাণ দেখুন, ঘটনা ১৮ জুলাইয়ের। মামলা ৮ জানুয়ারি। ঘটনার ৬ মাস পর মামলা। মামলা পরিকল্পিত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।

তিনি আরও বলেন, মামলার ঘটনায় জড়িত থাকলে তিনি পালিয়ে যেতে পারতেন, যাননি। কারণ তিনি কারো ক্ষতি করেননি। তার অপরাধ তিনি ১০ আসনের সাবেক এমপি। অসুস্থ, ব্ল্যাড ইনফেকশনে আক্রান্ত। তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের প্রার্থণা করেন।

এসময় আদালতে কথা বলার অনুমতি চান আসামি
শফিউল ইসলাম। অনুমতি নিয়ে তিনি বলেন, আমি কখনোই রাজনীতি করিনি। এই নির্বাচনের ৯ মাস আগে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে বলে আসি নির্বাচন করবো না। নির্বাচন বিভাজন, অনৈক্য সৃষ্টি করে। আমি ৬ বার বিজিএমইএ'র সভাপতি, একবার এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলাম। পলিসি মেকিং থেকে শুরু করে দেশের উন্নয়নে কাজ করেছি। দুর্নীতির লাগাম না ধরতে পারায় সুফল আসেনি। নির্বাচনে আমি, বিএনপির ক্যান্ডিডেটসহ ৬ জন ছিলাম। আমরা একটা ব্যতিক্রম নির্বাচন করার কথা বলেছি। ৬ ক্যান্ডিডেট নির্বাচন কমিশনে গিয়ে মিটিং করেছি। ৬ টি স্থানে মিছিল মিটিং না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

আমি ১৬ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। কেউ একজন বলেছিলো সংখ্যাটা বাড়িয়ে দেয়। আমি বলেছি না। যা পেয়েছি সেটাই হবে। নির্বাচনে কিন্তু সকল অংশ নিয়েছিলো, নির্বাচন করেছিলো। আমার নির্বাচনী এলাকা ধানমন্ডি, কলাবাগান, মোহাম্মদপুরে কারো বাড়ি দখল করিনি, প্রতিবেশী কাউকে কষ্ট দেয়নি। আমার নির্বাচনী এলাকায় কেউ আমার বিরুদ্ধে কিছু বলবে না। আদালতে আসার অভিজ্ঞতা নাই আমার। সকলকে এক পাল্লায় মাপলে যে আইনের শাসনের কথা বলা হচ্ছে তা ব্যাহত হবে।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী আরও বলেন, আসামি শফিউল ইসলাম, সালমান এফ রহমান, আতিকুল ইসলাম, সালাম মুর্শেদীরা সিন্ডিকেট করে আওয়ামীর বাইরে কাউকে ব্যবসা, নির্বাচন করতে দিতেন না। কি পরিমাণ সার্ভিস দিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারকে পুরস্কার স্বরূপ ঢাকা ১০ আসনে নির্বাচনের সুযোগ পান। তিনি কিন্তু রাজনীতিবিদ না। তাহলে তিনি কেন নির্বাচন করবেন। নির্বাচন করবে তো রাজনীতিবিদরা। এরপর আদালত তার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

গত ৮ জানুয়ারি ঢাকার উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানা। এরপর এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৭ নং সেক্টরে গুলিতে নিহত হয় ভিকটিম রউফ। এ ঘটনায় তার ভাই শাকিব হাসান গত ৮ জানুয়ারি উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন। মামলার ৭ নং এজাহারনামীয় আসামি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

বিভাগ : বাংলাদেশ